ফুলতলীতে অন্ধ-প্রতিবন্ধীদের মিলনমেলায় কিছু মুহূর্ত
১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৬ এএম

মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব ফুলতলী পরিচালিত লাতিফি হ্যান্ডসের শতাধিক চ্যারিটি প্রজেক্টের মধ্যে তাঁর হৃদয়ের অত্যন্ত কাছের একটি প্রজেক্ট হচ্ছে অন্ধ-আতুর সেবা প্রকল্প। প্রতি মাসে দুই শতাধিক অন্ধ-আতুরের জন্য তিনি ব্যবস্থা করেন মাসিক ফুড প্যাক, নগদ সাহায্য, কাঁচা গোশত, সিজন্যাল ফল-মূলের। তাছাড়া প্রয়োজন অনুসারে তাদের জন্য ব্যবস্থা করেন ছাতা-লাঠি, ক্রাচ-হুইল চেয়ার, জুতা-স্যান্ডেল, লেপ-তোশক, বেড-মশারী ইত্যাদির।
আমার বিশ্বাস বড় ছাহেব এই অন্ধ-আতুর-প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের কষ্ট-ব্যাথা আর স্ট্রাগল অনুভব করেন হৃদয় থেকে। আর তাইতো তিনি অন্ধদের হৃদয়ের ভাষায় রচনা করেছেন ‘নয়নের আলো নিভিয়া গেল, চেনা জানা এ পৃথিবী আর দেখিব না। অভাগা সন্তানদেরে দেখিয়া নয়ন ভরে, আকুল কাঁদন আমি আর কাঁদিব না।’ হাত বিহীন পা ভাঙ্গা আতুরের কষ্টের কথা ফোটে ওঠে তার কবিতায়: ‘চেনা জানা লোকালয় বহু দূর মনে হয়, বিকল চরণে আমি চলিতে পারি না। এ জীবনে যত আশা বেঁধে ছিল বুকে বাসা, কেমনে উধাও হলো আমি জানি না।’
সৌভাগ্যক্রমে হযরত বড় ছাহেবের নির্দেশে এপ্রিল মাসের মাসিক সাহায্য বিতরণের দিন অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম ফুলতলীতে। দেখলাম, তিনি কেবল তাদের পার্থিব বিষয় নিয়েই চিন্তা করেন না, চিন্তা করেন তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং পরকালীন মুক্তি নিয়েও। দুই শতাধিক অসহায় অন্ধ-আতুর এবং তাদের পরিবার-পরিজন উপস্থিত হলেন ফুলতলীতে; উযু করে এসে বসলেন তাদের জন্য নির্ধারিত খানেকা ঘরে। পর্দার আড়ালে বসানো হলো মহিলাদেরকে। যুহরের জামাআতে শরীক হলেন নিজ নিজ স্থানে। নামায পরে বড় ছাহেব উপস্থিত হলেন। যারা কুরআন শরীফ পড়তে পারেন তাদের হাতে দেওয়া হলো সূরা ইয়াছিনের কপি। যারা পড়তে পারেন না, তাদেরকে বলা হলো দুরুদ ও ইস্তিগফার পড়তে। তারপর বড় ছাহেব সকলকে নিয়ে খতমে খাজেগান পড়লেন। শিফার দু‘আ, মুসিবতের দু‘আ, কষ্ট নিবারণের দু’আ পড়তে মনে হলো দুই শতাধিক অন্ধ-আতুরের ফরিয়াদ যেন নিজের কষ্ট হিসেবেই তিনি তুলে ধরছেন রাব্বে কারীমের কাছে।
তারপর কিবলাহর দিকে ফিরলেন। যে পাশেই রয়েছে তাঁর মহান পিতা ও মুরশিদ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর মাযার শরীফ। অত্যন্ত আদবের সাথে দাঁড়িয়ে সালাত ও সালাম জানালেন রাহমাতুল লিল আলামীন (সা.) এর প্রতি, যেন হৃদয় থেকে মদীনাওয়ালাকে বলছেন, আপনার এক আশিককে সামনে রেখে, আপনার প্রিয়তম মানুষ অন্ধ-আতুরগুলোকে আমার পেছনে নিয়ে আপনার প্রতি সশ্রদ্ধ সালাত ও সালাম জানাচ্ছি হে প্রিয় আঁকা। আমাদের দিকে নজরে করম ফরমান, এই এতীম-মিসকিন, অন্ধ-আতুরগুলোকে আপনার দরবারে একটু ঠাঁই দিন, যাতে দুনিয়ার কষ্টের বদলে তাদের আখিরাত যেন কন্টকহীন হয়।
আরেকটি জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম। সাধারণতঃ আমরা অন্ধ-আতুর-মিসকিনদেরকে ছোট করে দেখি। যদিও কুরআনের নির্দেশনায় দেখা যায় আল্লাহ পাক অন্ধকে প্রাধান্য দিয়েছেন। হাদীসের নির্দেশনায় দেখা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবন্ধী-অসুস্থ মানুষদেরকে স্পেশ্যাল মানুষ বলেছেন। হযরত বড় ছাহেবও দেখলাম দু‘আর আগে দুই শতাধিক অন্ধ-আতুর-প্রতিবন্ধী মানুষের দিকে ফিরলেন। বললেন, ‘আপনারা আল্লাহর বড়ো প্রিয় মানুষ। আপনাদের দু‘আ কবূল হয়। আমাদের জন্য দু‘আ করবেন। বিশেষ করে আমাদের উমরাহ সফরের জন্য দু‘আ করবেন।’ বিশেষ এই মুহুর্তেও সদ্য প্রয়াত তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্যও দু’আ চাইতে তিনি ভুললেন না। বললেন, ‘আমাদের সাথে একজন মানুষ সবসময় উমরাহতে যেতেন। এ বছর তিনি আর যেতে পারবেন না। তার জন্য আপনারা দু’আ করবেন, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম নসীব করেন।’ এরপর তিনি সবাইকে নিয়ে দু‘আ করলেন। বিশেষ এই মানুষগুলোর কান্নার আওয়ায আর বড় ছাহেবের হৃদয়স্পর্শী দু’আ আমার মত পাষাণ হৃদয়েও আঘাত করল। দু’আ শেষে বড় ছাহেবও বললেন, ‘আজকের দু’আয় বড় ইতমিনান পেলাম’।
এরপরই লাইনে থাকা অন্ধ-প্রতিবন্ধী মানুষদের মাঝে সুশৃঙ্খলভাবে ফুড প্যাক, নগদ সাহায্য, কাঁচা গোশত, তরমুজ ইত্যাদি বিতরণ করা হলো। নেতৃত্ব দিলেন তাঁরই দুই ছাহেবজাদা মাওলানা ফারহান আহমদ চৌধুরী রেদা এবং মাওলানা লোকমান আহমদ চৌধুরী সাদী। ব্যাকগ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে সুললিত কন্ঠে অন্ধ-আতুরের হৃদয়ের আঁকুতিমাখা বড় ছাহেব রচিত গযলগুলো গাইতে থাকলেন প্রখ্যাত নাশিদ শিল্পী মাওলানা কবি মুজাহিদুল ইসলাম বুলবুল। ‘এতীমোৃঁ দাসতে দু‘আ বুলন্দ করো রাব্বে কারীম সে ফরিয়াদ করো’ ‘দয়াময় মায়াময় রহমান রহীম, আমরা বড়ই অসহায় দীন-হীন, চোখ আছে তবু জ্যোতিহীন...’ ‘আমার এ ভাঙা ঘরে রুদ্র পড়ে বৃষ্টি ঝরে, ক্ষুধার জালা সহিতে পারি না’ ইত্যাদি গযল এক অপার্থিব মোহের সঞ্চার করে। বুলবুল ভাই এক পরিমান গাওয়ার পর থামলেন। বড় ছাহেব নির্দেশ দিলেন আরো গাইতে। হয়ত এই গযলগুলো তাঁকে রাব্বে কারীমের অসংখ্য-অগণিত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ে উদ্ভুদ্ধ করে, হয়ত আল্লাহর সামনে নিজেকে বিনয়ী, দীন-হীন কল্পনা করতে প্রেরণা যোগায়, ফুলতলীর এই ফুলবাগানে অনাথ-এতীম, অন্ধ-আতুর, দুস্থ-দুঃখীজনের আনাগোনায় যেন মশগুল থাকে কিয়ামত পর্যন্ত সেই দু’আয় হয়ত তাঁকে বিভোর করে রাখে।
আল্লাহ! বড় ছাহেবের এই খিদমাতগুলোকে কবূল করো। আমাদেরকে, আমাদের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনকে এই খিদমাতগুলোতে অংশ নেওয়ার প্রেরণা ও তাওফীক দাও। লাতিফি হ্যান্ডসের এই প্রজেক্টগুলোকে সফল করতে দেশ-বিদেশ থেকে যত মানুষ সহযোগিতা করেন, সকলকে উত্তম জাযা ও নেক জিন্দেগী নসীব করো। আমীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান